Saturday, November 18, 2017

রংপুরের বিপক্ষে ৩ ওভারে ৪ রান দিয়ে ২ উইকেট পাওয়া কে এই মেহেদি হাসান সুজন

১৫৪ রান চেজ করতে রংপুর রাইডার্সের হয়ে ওপেনিং করতে নামলেন টি-টোয়েন্টির ভয়ঙ্কর দুই ব্যাটসম্যান ক্রিস গেইল ও ব্রেন্ডন ম্যাককালাম। আর কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের অধিনায়ক তামিম ইকবাল কীনা বল তুলে দিলেন মেহেদি হাসানের হাতে!
না, মেহেদি হাসান মিরাজ নয়! তিনি তো খেলেন রাজশাহী কিংসের হয়ে! এই মেহেদি হাসানের ডাক নাম মেহেদি! তবে বল করেন মিরাজের মতোই, অফস্পিন।
প্রথম ওভারে কয়টা ছক্কা মারবেন গেইল? ম্যাককালামও নিশ্চয় বসে থাকবেন না! এমনই গুঞ্জন ভাসছিল বাতাসে।
মেহেদির করা লেগ স্ট্যাম্পে পড়া প্রথম বলটাই ঠিকমতো খেলতে পারলেন না ম্যাককালাম। মিডল স্ট্যাম্পে পিক করা দ্বিতীয় বলটা ঠেকালেন। তৃতীয় বলটা স্কয়ার লেগে পাঠিয়ে সিঙ্গেলস নিয়ে স্ট্রাইক দিলেন গেইলকে। অফস্ট্যাম্পে পড়ে নিচু হওয়া আর্ম বলটি গেইলের ব্যাট ফাঁকি দিয়ে আঘাত করলো প্যাডে! মেহেদির তীব্র আবেদনে কেন যে সাড়া দিলেন না আম্পায়ার! টিভি রিপ্লে জানালো, মেহেদি দূর্ভাগা এবং গেইল আউটই ছিলেন! পরের দুটি বল কোনোক্রমে সামলালেন গেইল, শেষটি তারপরও প্যাডেই লাগলো!
তৃতীয় ওভারে আবারও আক্রমনে এসে এক রান দিলেন মেহেদি। পঞ্চম বলটি অল্পের জন্য মিস করলো ম্যাককালামের লেগ স্ট্যাম্প! দুই ওভারে দুই রান!
ক্যাচ মিসের সুবাদে জীবন পাওয়া গেইল গোটা চারেক বাউন্ডারি মেরে আতঙ্ক ছড়ানোর পর তাকে ফেরান রশিদ খান। এই আফগান লেগস্পিনার এক বল পর আউট করেন থিসারা পেরেরাকেও।
নিজের তৃতীয় ওভারের প্রথম বলেই ম্যাককালামকে টেনে বের করে এনে স্ট্যাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলেন মেহেদি! এক বল পর স্বপ্নের মতো এক ডেলিভারিতে সরাসরি বোল্ড করে দেন শাহরিয়ার নাফিসকে!
৩ ওভারে ৪ রান দিয়ে ২ উইকেট পাওয়া মেহেদি নিজের শেষ ওভারে মিথুন আলীর হাতে একটি ছক্কা খেয়ে দিয়েছেন ১১ রান। সব মিলিয়ে তার বোলিং ফিগার দাঁড়ায়: ৪-০-১৫-২!
মূলত মেহেদির সেই শুরুর ধাক্কা ও রশিদ খানের যাদুতেই ১৪ রানে ম্যাচ জিতেছে কুমিল্লা! তবে ম্যাচের ফল ও গেইল-ম্যাককালাম উন্মাদনা পাশ কাটিয়ে এই মুহুর্তে সবার মুখে মুখে একটাই জিজ্ঞাসা- কে এই মেহেদি হাসান?
আসলে খ্যাতিমান কিংবা পরিচিত কোনো তারকা নন মেহেদি। বয়স প্রায় ২৩ ছুঁতে চললেও চেহারায় এখনো কৈশোরের ছাপ স্পষ্ট। গড়নটাও হালকা পাতলা। কিন্তু ডান হাতের কব্জির মধ্যে যে কী ভয়ঙ্কর অস্ত্র লুকিয়ে রয়েছে, তা তো জানাই গেল!
খুলনার এই ক্রিকেটারের বিপিএল অভিষেক হয়েছিল গত বিপিএলে। বরিশাল বুলসের হয়ে দুই ম্যাচ খেললেও বোলিং পেয়েছিলেন মোটে এক ওভার! ১৩ রান দিয়ে কোনো উইকেট পান নি। এবার কুমিল্লা তাকে দলে নিয়েছিল এবং আজই প্রথম নামলেন ভিক্টোরিয়ান্সদের জার্সি গায়ে।
অবশ্য খুলনার হয়ে প্রথম শ্রেনীর ক্রিকেটে মেহেদির অভিষেক হয়েছিল ২০১৫ সালেই। এরই মধ্যে ২২২টি ফাস্ট ক্লাশ ম্যাচ খেলে নিয়েছেন ২২ উইকেট। গত মাসে বাংলাদেশ ‘এ’ দলের হয়ে আয়ারল্যান্ড ‘এ’ দলের বিপক্ষে সিলেটে অনুষ্ঠিত চার দিনের ম্যাচে দুই ইনিংসে ৩টি করে নিয়েছেন ৬ উইকেট। সেই আইরিশদের সঙ্গেই আনঅফিসিয়াল ওডিআই সিরিজে তিন ম্যাচে ৩ উইকেট পেয়েছেন। তার আগে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের হয়ে গত বছর ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে অভিষেক হয়েছিল তার।
পাদপ্রদীপের বাইরে থাকা অখ্যাত মেহেদিকে বিপিএল মঞ্চে একটি ম্যাচের নৈপূণ্য ছায়া থেকে নিয়ে এসেছে আলোয়! এলাম, দেখলাম, জয় করলাম জাতীয় নৈপূণ্য দেখিয়ে জিতে নিলেন ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরষ্কারও!
মেহেদির সামনে নিশ্চয় অপেক্ষা করছে সুদিন

No comments:

Post a Comment